আজ ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংগৃহীত ছবি

আজ বিশ্ব ফোকলোর দিবস


চাটগাঁর সংবাদ ডেস্কঃ ব্রিটিশ লেখক ও গবেষক উইলিয়াম জন থমস ১৮৪৬ সালে ‘লোককাহিনী’ শব্দটি ব্যবহার করে লন্ডনের থর্ন নামক একটি ম্যাগাজিনে নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এরপর প্রতিবছর ২২ আগস্ট বিশ্বব্যাপী ফোকলোর দিবস পালিত হচ্ছে।

থমস তার লেখনীতে ‘লোক’ এবং ‘লোর’ শব্দগুলিকে একত্রিত করেছিলেন। তিনি শব্দটিকে ‘জনগণের ঐতিহ্যগত জ্ঞান’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এই কারণে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ এই দিবসে তাদের লোককাহিনী এবং লোক ঐতিহ্য উদযাপন করে।

১৯৬৫ সালে ব্রাজিলের তৎকালীন সামরিক কমান্ডার হাম্বারতো দে অ্যালেনকার কাস্তেলো ব্রাঙ্কো লোককাহিনী দিবস প্রতিষ্ঠার উপর জোর দেন। তার উদ্যোগে ব্রাজিলিয়ান জাতির সংস্কৃতিতে লোককাহিনী শিক্ষার তাৎপর্যের উপর জোর দেওয়া হয়। এইভাবে লাতিন আমেরিকান জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং ব্রাজিলীয় লোকসাহিত্যের অধ্যয়নের প্রচারের জন্য লোকসাহিত্য দিবসের সূচনা হয়েছিল। ব্রাজিলিয়ান লোককাহিনী দিবসের উদ্দেশ্য হল দেশের লোককাহিনী এবং কিংবদন্তিদের সম্মান করা। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, ব্রাজিলের প্রাচীনতম মানব বসতিগুলি প্রায় ৩০ হাজার বছর পুরানো।

যে কোনো দেশে শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার সময় লোককাহিনী বিশেষ প্রভাব রাখে।
বাংলাদেশেও এর ব্যত্যয় ঘটে না। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশে ঘটা করে ফোকলোর দিবস উদযাপনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না। তবে কোনো কোনো সময় ফোক ফ্যাস্টিভ্যাল করে এটি উদযাপন করতে দেখা গেছে। এছাড়া বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ফোকলোর সাহিত্যের পড়াশোনা করানো হয়।

বাংলা লোকসাহিত্যের এক অনিন্দ্য লোককথা ‘কিস্‌সা’। গ্রামবাংলায় কিংবা শহরে যত ধরনের লোককথা রয়েছে তার মধ্যে কিস্‌সার সর্বজনীন জনপ্রিয়তা অবিসংবাদিত। আবাহমান বাংলার লোকসাহিত্যের উর্বর ধারা এই কিস্‌সা কেবল বাংলা লোকসংস্কৃতিকে ঋদ্ধ করেনি বাংলা সাহিত্যকেও করেছে পরিপুষ্ট ও সমৃদ্ধ। এর মাধ্যমে সৃজিত হয়েছে বাংলা সাহিত্যের নবধারা। কিস্‌সা বাংলা কবিতা এবং গদ্যের একটি ধারার পাশাপাশি মৌখিক গল্প-বর্ণনার বাংলা ভাষার একটি ঐতিহ্য।

তবে ড. নিগার সুলতানার মতে, ফোকলোর বলতে বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ বা অনেকাংশে সাহিত্যের ক্ষুদ্র অংশকে নির্দেশ করা হয়, প্রকৃত অর্থে ফোকলোর সাহিত্যের কোন নির্দিষ্ট অংশ বা ভাগ নয়। ফোকলোর অন্যান্য বিষয়ের মত একটি স্বতন্ত্র বিদ্যাশাখা। যে বিষয়টি নিইয়ে মতানৈক্য দেখতে পাওয়া যায়। ফোকলোর ও বাংলা সাহিত্য নিয়ে বিতর্কটি সামনে আসে ২০১৯ সালে যখন ইউজিসি কর্তৃক ফোকলোর বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়কে বাংলা বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সমমর্যাদা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোকলোর অ্যান্ড অ্যাথনোমিউসিকোলজি’র ডিগ্রি অর্জনকারী এই বিশেষজ্ঞের মতে, ‘ফোকলোরকে যারা সাহিত্য ভাবেন তারা এটিকে মনে করেন সাহিত্যের একটি ভাগ। যদিও সাহিত্য রচনা ও লোক সাহিত্য রচনা ও চর্চার পুরো প্রেক্ষাপট একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও আলাদা। সাহিত্য এবং ফোক সাহিত্যকে আলাদা করার দুটি অন্যতম ধারনা হচ্ছে লোকসাহিত্য গোষ্ঠীগত সৃষ্টি এবং এর পুনঃ সৃষ্টি বা সৃষ্টির ধারাবাহিক প্রক্রিয়া চলমান থাকে। অন্যদিকে সাহিত্য একটি নির্দিষ্ট রচনাকে বুঝায়। উদাহরণ স্বরূপ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা কর্ম তার নিজস্ব সাহিত্য শৈলী, অপরদিকে বাউল সঙ্গীত গোষ্ঠীগত সৃষ্টি।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর